সারাবিশ্বে
গবাদী পশু পালনে হুমকি স্বরূপ যে কয়টি রোগ রয়েছে তার মধ্যে এনথ্রাক্স অন্যতম। বাংলাদেশে এই রোগের
অন্য একটি নাম তড়কা রোগ। এটি অন্যতম একটি জুনোটিক রোগ। অর্থাৎ মানুষও আক্রান্ত হয় এই রোগে। গবাদী পশুর এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশী। প্রায় শতভাগ পশু মারা যায়। শুধু গবাদী পশুই নয় এই এনথ্রাক্সের ছোবলে আক্রান্ত হয়, গবাদী পশু পালন ও চিকিৎসার সাথে জড়িত মানুষ, বিশেষত খামারি, ভেটেরিনারি ডাক্তার এমনকি কসাইরাও।
সারাবিশ্বে
গবাদী পশু পালনে হুমকি স্বরূপ যে কয়টি রোগ রয়েছে তার মধ্যে এনথ্রাক্স অন্যতম। বাংলাদেশে এই রোগের
অন্য একটি নাম তড়কা রোগ। এটি অন্যতম একটি জুনোটিক রোগ। অর্থাৎ মানুষও আক্রান্ত হয় এই রোগে। গবাদী পশুর এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশী। প্রায় শতভাগ পশু মারা যায়। শুধু গবাদী পশুই নয় এই এনথ্রাক্সের ছোবলে আক্রান্ত হয়, গবাদী পশু পালন ও চিকিৎসার সাথে জড়িত মানুষ, বিশেষত খামারি, ভেটেরিনারি ডাক্তার এমনকি কসাইরাও।
এই এনথ্রাক্সের
কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশে অনেক পশু মারা যায়। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। এনথ্রাক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে মরণ ব্যধী
পশুর ক্ষেত্রে। অনেক সময় দেখা যায়
সুস্থ পশু হঠাৎ করে মারা যায়। অনেকে এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন মাঠে পশু চরাতে রেখে এসে পরে গিয়ে দেখেছেন পশু
মারা গেছে।
 |
http:// nirrjon.blogspot.com |
***এনথ্রাক্স
(তড়কা) রোগের কারণ
এনথ্রাক্সের
কারণ ব্যসিলাস এনথ্রাসিস (Bacillus
anthracis) নামক গ্রাম পজিটিভ, দন্ড আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যকটেরিয়া স্পোর তৈরি করতে পারে। নন মোটাইল ব্যকটেরিয়া। এই ব্যকটেরিয়ার
কিছু রাসায়নিক ও প্রকৃতিক কারণে এই এনথ্রাক্সের প্রকোপ বেশী বলে প্রমাণ করেছেন গবেষকরা। এর স্পোর দীর্ঘদিন মাটিতে এমনকি পানিতে বেঁচে থাকতে
পারে। এর এই সময় কাল ১০-৮০ বছর পর্যন্ত ও হতে পারে।
***রোগের ইতিহাস
মানুষের মানবিক
বিপর্যয়ের অংশ হিসেবে যেসব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাতে জীবাণু অস্ত্র হিসেব
এনথ্রাক্স রোগের জীবাণু ব্যবহার করা হতো।
ইতিহাস হতে
জানা এই রোগের প্রথম প্রভাব দেখা গিয়েছিলো মিসরে ১৯৪১ সালে। শুধু মিসর নয় গ্রীস, রোম এমনকি ভারতবর্ষেও এই রোগের প্রকোপ ছিল অনেক বেশী। সপ্তাদশ শতকে এই রোগ ইউরোপে মহামারি
রুপে দেখা গিয়েছিল এই এনথ্রাক্স।
যেসব প্রাণী
আক্রান্ত হয়
সকল উষ্ণ
রক্তেরপানীতে এই রোগ দেখা যায়। বিশেষত গরু, মহিষ, ছাগলসহ অনান্য গবাদীপশু। মানুষ ও এই রোগে আক্রান্ত হয়।
চিড়িয়াখানার হাতিও এই এনথ্রাক্স রোগে
আক্রান্ত হতে পারে ।
যেভাবে রোগ
ছড়ায়
১। আক্রান্ত
পশুর রক্ত আদান প্রদান কালে সিরিঞ্চ ব্যবহারে।
২। আক্রান্ত
পশু খাদ্য বন মিল, মিট মিল এবং অনান্য খাদ্য উপাদানের
সাহায্যে সংক্রামিত হতে পারে।
৩। খাদ্য ও
পানির মাধ্যমে সংক্রামিত হতে পারে।
৪। আক্রান্ত
এলাকার পশুর শরীর হতে এনথ্রাক্সের স্পোর বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে অন্য এলাকায়
পশুকে আক্রমণ করতে পারে।
৫। কোন ঘাসের
উপর এই রোগের জীবাণুর স্পোর থাকলে তা যদি পশু খায় তাহলে তা পশুতে রোগ সৃষ্টি করে।
এপিডেমিলিওজি
প্রতিবছর
নির্দিষ্ট সময়েই এই রোগ প্রকট আকার ধারণ করে। তার কিছু বিজ্ঞান সম্মত কারণও রয়েছে। কোন এলাকায় একবছর
এনথ্রাক্স দেখা দিলে তার স্পোর দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যখন সে তার উপযোগী পরিবেশ পায় তখন সে বংশবিস্তার করে রোগ সৃষ্টি করে। এই
জীবাণু উচ্চ তাপমাত্রা, চাপ এমনকি পানির মধ্যেও দীর্ঘদিন থাকে। যখন আবার নতুন
ঘাস জন্মে সেই ঘাসের উপর থাকে এর স্পোর। যখন গরু খায় আক্রান্ত হয়।
মানুষের মধ্যে
যারা আক্রান্ত পশুর গোস্ত প্রস্তুত করে তাদের মধ্যে যদি কারো হাতে কোন ক্ষত থাকে তাহলে সেই ক্ষতের মাধ্যমে
জীবাণু প্রবেশ করে শরীরে ক্ষত ক্ষতের মত দাগ সৃষ্টি করতে পারে।
***লক্ষণ
 |
http://nirrjon.blogspot.com |
তড়কা রোগে
আক্রান্ত হলে পশুকে অনেক সময় কোন লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে লাফাতে লাফাতে মারা যায়। অতি তীব্র অবস্থায় লক্ষণ
প্রকাশের ১-২ ঘন্টার মধ্যেই মারা যায়।
অতি তীব্র হলে
১। প্রচন্ড
জ্বর (১০৫-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাপুনি সহ জ্বর।
২। এই প্রকৃতির
রোগ হলে প্রচন্ড পেশী কম্পন, শ্বাস কষ্ট ও
মিউকোসায় রক্ত দেখা যায়।
৩। আক্রান্তের
১-২ ঘন্টার মধ্যেই পশু মারা যায় ।
৪। মৃত পশুর
নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কালো আলকাতরার
মত রক্ত বের হতে থাকে। রক্ত জমাট বাঁধেনা। তীব্র
প্রকৃতির হলে- এই প্রকৃতিতে আক্রান্ত পশু ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকে।
প্রচন্ড জ্বর
ক্ষুধা মন্দা, অগভির ও দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস ও
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, পেট ফুলে যাওয়া, চোখের রক্ত দেখা যাওয়া, রক্ত মিশ্রিত মলত্যাগ লক্ষ্য করা যায়।
দুগ্ধবতী গাভীর
ক্ষেত্রে দুধের উৎপাদন অনেকাংশে কমে যায়। দুধ হলুদ বর্ণ ধারণ করে ধারণ করে।
গর্ভবতী পশুর গর্ভপাত ঘটে থাকে।
***মানুষের
ক্ষেত্রে
শরীরের বিভিন্ন
অংশে বিশেষত চামড়ার মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি হয়। মশা বা মাছি যদি এই জীবাণু বহন করে তাহলে তা কামড়ের সাথে সাথে লাল
হয়ে ফুলে উঠে এবং ব্যথা হতে
পারে।
***চিকিৎসা
সেপ্টিসেমিক
রোগ এনথ্রাক্স এত দ্রুত রোগ বিস্তার করে অনেক সময় চিকিৎসার কোন সময় পাওয়া যায় না। তবে তীব্রতা কম
হলে চিকিৎসায় ভালো হয়। আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে রাখতে হয়।
তার সবকিছুই
আলাদা রাখতে হবে, আলাদা ভাবে খেতে দিয়ে চিকিৎসার
ব্যবস্থা করা হয়। অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান দ্বারা
দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে পেনিসিলিন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক ভালো কাজ করে থাকে। গুরুতর অসুস্থ পশুকে প্রোকেইন পেনিসিলিন ( Procaine Penicillin) – প্রতি কেজি ওজন হারে শিরাপথে দৈনিক একবার করে ৫-৭ দিন
দিতে হবে।
নিয়ন্ত্রণ
এনথ্রাক্স
নিয়ন্ত্রের জন্য একমাত্র ব্যবস্থা হলে নিয়মিত টিকা প্রদান। এনথ্রাক্সের নিয়ন্ত্রণের জন্য
এনথ্রাক্স স্পোর ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। যা ৬ মাস বয়সের পশু হতে শুরু করে সকল বয়সের পশুকে এক বছর
অন্তর অন্তর ১ মিলি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে। এনথ্রাক্সের ফলে পশু মারা গেলে তাকে ভাগাড়ে অথবা ডাস্টবিনে না পেলে ৬ ফুট মাটির
নিচে চুন ছিটিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। আক্রান্ত পশুকে সর্বদা আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত পশুর গোস্ত খাওয়া পরিহার করতে হবে। প্রতিবছর টিকাদান নিশ্চিত করতে
হবে। নতুন কোন পশু ক্রয় করার সাথে সাথেই তাকে টিকা দিয়ে নিতে হবে। এসব নিয়ম অনুসরণ করলে অনেকাংশেই এনথ্রাক্সের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন